বুধবার, ৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৯

বাঁশকাব্য


বাঁশ! কে কখন কাকে দেবে...  এমন ভাবনা মুখরিত যাপনবেলায়,
কীর্ত্তিমান,
দেখালেন, নানান জাতের বাঁশ,
বাঁশের বিবিধ ব্যবহার...
আমার
লেগেছে ভালো, গেঁথেছে পরানে, বাঁশের বাঁশরি!
বাঁশ না বাঁশির সহচর
সুন্দরের(!)
পথে পথে বাজাই বাঁশরি, ফেরি করি সুর।
কীর্ত্তিত শিল্পের ভোরে
বাজি, পৃথিবীতেহ্যামিলনে, বাঁশ না বাঁশির প্রয়োজনে!....
সখা!
কে তোমাকে দিলো বাঁশ? বানাও তাহাকে বাঁশি,
যাও
যমুনার কূলে, ডাকছে রাধিকা,
আর সখীদল।...
বাঁশ,
কে কখন কাকে দেবে... এমন ভাবনা মুখরিত যাপনবেলায়,
কহে তিতুমীর,
কার,
হাতের মুঠিতে খেলা করে লাঠিবাঁশি? যমুনার বুকে জাগা গ্রামবিশ্বচরে...

বাঁশকোঁড়ল


....................
‘খাবো’ ‘খাবো’ করে খাওয়া হয়নি কখনও!
আজ
পেয়ে গেলাম হঠাৎ, রয়েসয়ে স্বাদ নিচ্ছি, সবজিটির নাম : বাঁশকোঁড়ল!
খেতে খেতে ভেসে উঠল চোখের পর্দায়,
বাশঁনৃত্য—
ঠকাস্ ঠকাস্ টক্ টক্, ঠকাস্ ঠকাস্ টক্ টক্,
দ্রিমি দ্রিমি দ্রিম্ দ্রিম্, দ্রিমি দ্রিমি দ্রিম্ দ্রিম্,
তালে তালে
চতুর্ভুজে, ফাঁকে ফাঁকে, নৃত্যপর পায়ের চলন!...
মনে পড়ল, ইস্কুলপালানো দিন; বাঁশের কঞ্চির শপাং শপাং নিদারুণ ভালোবাসা!...
মনে পড়ল,
হরিপ্রসাদ নদীটির কূলে বাজা চৌরাশিয়ার বাঁশি!
বাঁশির নৈকট্যে সুরের পরানে জাগা বাঁশবাগানের টান, জানে মস্‌নবী!
বাঁশের কঞ্চির কলমের ইতিহাসে
মনে পড়ল,
আরো কত না কাহন!...

স্বাদের আঘ্রাণে জাগা কালস্য জিহ্বা থেকে
ঝরে
ধ্বনির মঞ্জরি :
বাঁশের জয় হউক ভিন্নভিন্ন স্বাদে ও স্বাধীনতায়...

লাঠি


নবীন বাঁশের কারুকাজ ভালোবেসে
প্রিয়জ তোমাকে আজ ভাষা দিতে ইচ্ছে করছে!
প্রিয় লাঠি, কথা কও!...

লাঠিটা
মাটিতে ফেলতেই… হলো দাঁড়ি।...

লাঠিটা
মাটিতে ফেলতেই… হলো রেখা— যেন পথ…
নদীর ওপারে...

লাঠিটা
মাটিতে ফেলতেই… হলো দাঁড়! দেখে, পারাপারের ত্বরণি!...

সাপ আর বাঁশ


...
তেড়ে আসে সাপ, তেড়ে যায় বাঁশ,
দেখার বিষয়, কে কাকে বানায় লাশ,
এই অভিলাষ, দেখছে,
বোধন দাশ!…
তেড়ে আসে সাপ, তেড়ে যায় বাঁশ,
সকল কুলের নাশ,
একের ভিতর এক, করে বাস,
জানতেন মুসা? ভাবছে,
বোধন দাশ!…

ফুলের কড়চা


প্রজাপতি,
রঙিন ডানার আলপনা মেখে মনে,
উড়ছে বাগানে, লাভে, ফুলের একক মালিকানা!

এমন সময়ে
  বিরূপভাষণে
      মৌমাছিসভায় প্রস্তাবনা— ফুল হোক সকলের!
............
সময়চাকায়
দলিত ফুলের বসবাসে;
বন্ধুর অধিক
 একটি দোলনচাঁপার অভাবে ভাবে আছে
        মৈত্রেয়ীপরান।

                 যাবে, আরো কিছুকাল।...

তারপর,
ভাবে ও অভাবে
আলোড়নে
ফুটিবে দোলনচাঁপামৌমাছিকুলের কাঙ্ক্ষিতা!...

ঝাঁকা


……………………….
থমথম
চারিদিকে ফাঁকা। ফাঁকার পরানে মার ঝাঁকা,
     ঝাঁকা ঝাঁকা ঝাঁকা…
          ঝাঁকার পরানে জাগবে আবার কোলাহল।…
চল্,
দেয়াল ভাঙার কারুকাজে,
বল্
: হেঁইয়ো, হেঁইয়ো, হেইয়ো, হেঁ-ই-য়ো।
দে-রে, ঝাঁকা, ঝাঁকা, ঝাঁকা… ভেঙে, পড়বে দেয়াল, ঝুর ঝুর ঝুর...

থমথম। চারিদিকে ফাঁকা। ভাই, হ রে বাঁকা।
সোজা আঙুলে ওঠে না রে ঘি।

পথে পথে ঘুরে, শেকলছাড়া কুকুর,
মার্,
ঝাঁকা ঝাঁকা ঝাঁ-কা।

আছে
বারতা লুকানো কথার মিছিলে, নহে ফাঁকা।...

এইসব,
আমি না, বলছে কাকা।...

প্রস্তাবনা


.................................
পশ্চিম আকাশ
/
ঈষৎ হেলানো দিবাকর/ সিঁথির সিঁদুর ঢেলে নীলিমায়/
আত্মহননের কালচক্রে ডুবে গেল ক্রমাগত
/
কালাক্ষির তৃষিত অধ্যায়ে/
এবং তুমিও
/...
সেই থেকে বিহঙ্গী আকাশ/ বর্ণচোরা দিনের ব্যঞ্জনা/
দ্বিপাক্ষিক আলো আঁধারির যইবনমগ্নলীলা
/...
বিবর্তিত পৃথিবীর পান্থপথে/
একদিন
/
তুমি ফিরে এলে
/ এবং আমিও/
অনাগত শিল্পের দরোজা খুলে
/ ডেকে বললাম/
এসো
/
বিয়োগব্যথার শ্রাবণধারায় ভিজে
/ মগ্ন হই/ আগামীদিনের ভূমিকায়/

সংলাপ


...............................
— প্রীতির অরণ্যে জেগেছে একটা গাছ
— ফুল ফল যে ফলে না
— ফলবে
— কখন
— নির্ব্বাচিত ফাল্গুনে
ফুলে ফলে ভরবে গাছটা
হাওয়ায় হাওয়ায় বাজাবে নূপুর সবুজ পাতার ভোর
বারোদুয়ারি বাড়ির আঙিনায় বাড়বে গাছটা
আলোছায়ানীড়ে
মাটি আর জলের আদরে
ফলাব
নির্ব্বাচিত ফাল্গুন...
ফলজ জীবনযোগে
আমাকে বাসনা করো
এমন মালির দেখা আর কখনো পাবে না...

স্পর্ধা


উপকূল
সবুজ প্রকল্পে, প্রজাতির তালিকায় আপনার নাম নেই!
তবু
রয়েছেন ফুটে,
স্পর্ধা!
কী এমন দুর্বিনীত—
বুনোফুল, এ কি লজ্জা দিচ্ছেন আমাকে?
নানান রকম তালিকার বহি থেকে বাদ পড়া পলাতক আমি,
দেখে আপনাকে, দাঁড়ালাম…
বলছেন, ফিরে যাও, তালিকাবিহীন মানুষের কাছে,
কাতারে কাতারে সাজসাজ রবে!
জানি,
ঝুলবে তালিকা, পরোয়ানা!
যেইভাবে, ওড়না প্যাঁচিয়ে, ঝুলছে মেয়েটি, জীবনের দামে।
তবু
আগামী বর্ষায়, সবাক দাঁড়িয়ে যাব,
স্পর্ধা!

তিলোত্তমা


...
না/ ওটা তিল না/ বর্ণ/... ওখানে লুকানো আছে/
অর্থের বাগান/...
জগতের সকল উত্তম থেকে/
তিলতিল পরিমাণ
সৌন্দর্য্য নিয়ে গড়া/
তিলোত্তমার স্বাদ ও সাধনা/...
অব্যক্ত ব্যঞ্জনা নিয়ে ফুটে আছে/ অধরের কোণে/
সলাজ ভাষায়/...
তিলোত্তমা বর্ণ/ ইশারায় শিস্ দিয়ে যায়/...
অধরের ভাষা জানে/ অধরা আনন্দ/ রসিক জানে মর্ম্ম/...

প্রপিতামহের ছাতা

রোদ ঝড় একাকার…
চাইছি,
একটি ছাতা

জলে ভেজা
রোদে পোড়া দেহ,
ভীষণ অসুখে মুখ গোঁজে
ছেঁড়া ছাতার তলায়।
জল ও রোদের যুগল শাসনে
শাঁখের করাতে কেটে কেটে করছি বিলাপ—
নেবুপাতা করমচা,
রোদ ঝড় থেমে যা, যা...
নেবুপাতা করমচা, রোদ ঝড়
থেমে যা, যা...
সময়ের পথে হেঁটে হেঁটে...
চাইছি,
একটি ছাতা।
বিরল সত্য যে,
পৃথিবীতে...
ছোট ছোট
অনেক ছাতার সমাহারি
এ ছাতার নীচে হবে
আমাদের দিব্যি বেঁচে থাকা।...

যুক্তাঞ্চল

.................
জানি;
মৃত্যু যেখানে মহিমাময়,
সেইখানে, তোমাকে ঠেকানো বড় দায়!
তবু বলি,
এইসব মৃত্যুর মিছিলে
তুমি কী ধর্ম্ম করছ হে খ্যাপা?
‘ধর মিতি মিতি’ রাগে
(ধারণ যোগ ম-এ
মনের ধরনে গাঁথা) ধর্ম্ম—
যে ভাবের রসে
মিলন বিরহে গাঁথা জীবনকলায়,
‘কর মিতি মিতি’ রাগে
(করণ যোগ ম-এ
মনের করণে গাঁথা) কর্ম্মে, তুমি যুক্ত করো হে বন্ধন!
(মুক্তমনা না, যুক্তমনা আমি!) মুক্ত করো ভয়, সম্মুখসমরে ডাকে যুক্তাঞ্চল!...
মুক্ত বকুলেরা জানে,
যুক্ততায়
সুতোর গাঁথুনি, মালাবিনিময়!...
তেমনি, আয় তবে হাতে হাত রাখি রাখির বাঁধনে।
খ্যাপা, ক্রিয়াশীলা নদীর মননে
জলের ঘূর্ণনে বাজে প্রতি-ক্রিয়াশীলতার গান?...
ভেসে যাওয়া
জনপদের কাহিনি জানে,
পাহাড়ের ঢাল বেয়ে নামা অথৈ প্লাবন,
পিছনে রাখিয়া যায় পলিভাষা, নবতর ফসলি বিন্যাসে!...
শাশ্বতীর মনে,
বাদে ও বিবাদে আয় অবাধ সমুদ্রে,
ভেদ ও বিভেদে আয়
অভেদ সমুদ্রে...
খ্যাপা,
তিনি সর্ব্বভূতে বিদ্যমান, ফানা!...